ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের নির্দেশনা মানছে না তিতাস গ্যাস

  • পোস্ট হয়েছে : ১২:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০
  • 3

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দশনা মানছে না শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যে কোম্পানিটি দূর্বল পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে এফডিআর করে অর্থ ফেরত না পাওয়ার ঝুকিঁতে পড়েছে।

তিতাস গ্যাসের ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষক এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এফআরসির চলতি বছরের ২ মার্চের এক নির্দেশনায় শেয়ার মানি ডিপোজিটকে অফেরতযোগ্য ও ৬ মাসের মধ্যে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) গণনায় বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। তবে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এফআরসির এই নির্দেশনা মানছে না।

তিতাস গ্যাস সরকারের কাছ থেকে ২৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। যা শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে দেখানো হয়েছে। এই কোম্পানিটির চলতি বছরের ৩০ জুন শেয়ার মানি ডিপোজিটের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ১৭৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকায়। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এই শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করেনি। এছাড়া এফআরসির নির্দেশনার পরে ১৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) ও আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে ৬০ কোটি ৬২ লাখ টাকা এফডিআর করেছে। কিন্তু ব্যাংক দুটির দূর্বল অবস্থার কারনে ওই টাকা আদায় নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যাতে করে সঞ্চিতি গঠন করা উচিত। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এতে করে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন…..

নির্মাণ ব্যয় বেশি দেখিয়ে নর্দার্ণ জুটের অর্থ আত্মসাৎ
গোল্ডেন হার্ভেস্টের পরিচালকদের প্রতারণা
আজিজ পাইপসের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা নিয়ে নিরীক্ষকের শঙ্কা
আরএসআরএম স্টিল সাড়ে ৫ কোটি টাকার আয় বেশি দেখিয়েছে
ধুকতে থাকা ন্যাশনাল ফিড থেকে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে অর্থ পাঁচার
প্রতারণা কিভাবে করতে হয়, তা দেখিয়ে দিল সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট এক চিঠিতে ইনসেনটিভ (প্রণোদনা) বোনাস প্রদানের আগে অর্থ বিভাগ থেকে অনুমোদন নিতে বলা হলেও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তা মানছে না বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। অর্থ বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অগ্রিম ইনসেনটিভ বোনাস দিচ্ছে এবং তা সমন্বয় করছে।

কোম্পানিটি কর্মীদেরকে ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে ৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকা অগ্রিম ইনসেনিটিভ বোনাস দিয়েছে। এরমধ্যে ১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। আর ওই অগ্রিম ইনসেনটিভের মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদায়ি কর্মীদের মধ্যে ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। যাতে করে এখন অগ্রিম ইনসেনটিভ বোনাসের পরিমাণ রয়েছে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকায়।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ৩০ জুন ৮১৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকার পেনশন ফান্ডের দরকার ছিল। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওইসময় মাত্র ৩০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করেছিল। এতে করে করে পেনশন ফান্ডের ঘাটতি ছিল ৭৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাকচুয়ারি ফার্ম জেড হালিম অ্যান্ড এসোসিয়েট পরবর্তী ৫ বছর ১৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার করে ফান্ড গঠন করার পরামর্শ দেয়।

এরপরে নতুন করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফান্ড গঠনের প্রয়োজন পড়ে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই ২ অর্থবছরে বিদায় নেওয়া কর্মীদের শুধুমাত্র ১০০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যাতে করে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পেনশন ফান্ডের গঠনের দরকার দাড়াঁয় ৮৩৮ কোটি ৫ লাখ টাকায়। কিন্তু প্রভিশন করা আছে ১২৪ কোটি টাকার।

উল্লেখ্য, বুধবার (০৯ ডিসেম্বর) লেনদেন শেষে তিতাস গ্যাসের শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ৩১.২০ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/১০ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:
ট্যাগ :

2 thoughts on “ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের নির্দেশনা মানছে না তিতাস গ্যাস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার মেইলে তথ্য জমা করুন

ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের নির্দেশনা মানছে না তিতাস গ্যাস

পোস্ট হয়েছে : ১২:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২০

বিজনেস আওয়ার প্রতিবেদক : ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) নির্দশনা মানছে না শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। যে কোম্পানিটি দূর্বল পদ্মা ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে এফডিআর করে অর্থ ফেরত না পাওয়ার ঝুকিঁতে পড়েছে।

তিতাস গ্যাসের ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় নিরীক্ষক এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এফআরসির চলতি বছরের ২ মার্চের এক নির্দেশনায় শেয়ার মানি ডিপোজিটকে অফেরতযোগ্য ও ৬ মাসের মধ্যে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) গণনায় বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। তবে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ এফআরসির এই নির্দেশনা মানছে না।

তিতাস গ্যাস সরকারের কাছ থেকে ২৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। যা শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসাবে দেখানো হয়েছে। এই কোম্পানিটির চলতি বছরের ৩০ জুন শেয়ার মানি ডিপোজিটের পরিমাণ দাড়িঁয়েছে ১৭৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকায়। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ এই শেয়ার মানি ডিপোজিটকে শেয়ার ক্যাপিটালে রুপান্তর করেনি। এছাড়া এফআরসির নির্দেশনার পরে ১৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) ও আইসিবি ইসলামীক ব্যাংকে ৬০ কোটি ৬২ লাখ টাকা এফডিআর করেছে। কিন্তু ব্যাংক দুটির দূর্বল অবস্থার কারনে ওই টাকা আদায় নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যাতে করে সঞ্চিতি গঠন করা উচিত। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এতে করে মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন…..

নির্মাণ ব্যয় বেশি দেখিয়ে নর্দার্ণ জুটের অর্থ আত্মসাৎ
গোল্ডেন হার্ভেস্টের পরিচালকদের প্রতারণা
আজিজ পাইপসের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা নিয়ে নিরীক্ষকের শঙ্কা
আরএসআরএম স্টিল সাড়ে ৫ কোটি টাকার আয় বেশি দেখিয়েছে
ধুকতে থাকা ন্যাশনাল ফিড থেকে পরিচালকদের ব্যক্তিগত কোম্পানিতে অর্থ পাঁচার
প্রতারণা কিভাবে করতে হয়, তা দেখিয়ে দিল সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট এক চিঠিতে ইনসেনটিভ (প্রণোদনা) বোনাস প্রদানের আগে অর্থ বিভাগ থেকে অনুমোদন নিতে বলা হলেও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তা মানছে না বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। অর্থ বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ অগ্রিম ইনসেনটিভ বোনাস দিচ্ছে এবং তা সমন্বয় করছে।

কোম্পানিটি কর্মীদেরকে ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে ৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকা অগ্রিম ইনসেনিটিভ বোনাস দিয়েছে। এরমধ্যে ১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে। আর ওই অগ্রিম ইনসেনটিভের মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদায়ি কর্মীদের মধ্যে ১৭ কোটি ২২ লাখ টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। যাতে করে এখন অগ্রিম ইনসেনটিভ বোনাসের পরিমাণ রয়েছে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকায়।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ৩০ জুন ৮১৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকার পেনশন ফান্ডের দরকার ছিল। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওইসময় মাত্র ৩০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করেছিল। এতে করে করে পেনশন ফান্ডের ঘাটতি ছিল ৭৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাকচুয়ারি ফার্ম জেড হালিম অ্যান্ড এসোসিয়েট পরবর্তী ৫ বছর ১৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার করে ফান্ড গঠন করার পরামর্শ দেয়।

এরপরে নতুন করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফান্ড গঠনের প্রয়োজন পড়ে। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই ২ অর্থবছরে বিদায় নেওয়া কর্মীদের শুধুমাত্র ১০০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যাতে করে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পেনশন ফান্ডের গঠনের দরকার দাড়াঁয় ৮৩৮ কোটি ৫ লাখ টাকায়। কিন্তু প্রভিশন করা আছে ১২৪ কোটি টাকার।

উল্লেখ্য, বুধবার (০৯ ডিসেম্বর) লেনদেন শেষে তিতাস গ্যাসের শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ৩১.২০ টাকায়।

বিজনেস আওয়ার/১০ ডিসেম্বর, ২০২০/আরএ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান: